সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস এন্ড ফোবিয়াস পর্ব এক - সেলফ ক্যানিব্যালিজম

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এই রোগের একটা ধারণা পাওয়া যায়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা মূলত মানুষের মাংস খেতে পছন্দ করে এবং খায়। এমনকি রোগের মাত্রা ...


প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এই রোগের একটা ধারণা পাওয়া যায়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা মূলত মানুষের মাংস খেতে পছন্দ করে এবং খায়। এমনকি রোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে নিজের মাংসও খেতে শুরু করে। ইতিহাসবিদদের মতে প্রায় ৬ লক্ষ বছর আগে থেকেই আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই নিজেদের নরমাংসভক্ষণ প্রথা প্রচলিত হয়ে আসছে।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও এটা দেখা গিয়েছিলো। তখন শীতকালে চলছিলো। আর রাতের বেলায় এই ক্যানিব্যালিজমের দেখা মিলতো। সেলফ ক্যানিব্যালিজম রোগটা মূলত এসেছে হিউম্যান ক্যানিব্যালিজম থেকে। হিউম্যান ক্যানিব্যালিজম হচ্ছে এমন এক ধরণের রোগ বা প্রথা যেখানে ক্যানিবলরা (যারা ক্যানিব্যালিজম প্রথা পালন করে) মূলত অন্য মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভক্ষণ করে থাকে। সেলফ ক্যানিব্যালিজম ছাড়াও আরেক ধরনের ক্যানিব্যালিজম রয়েছে, যেটাকে বলে সেক্সুয়াল ক্যানিব্যালিজম।


সতের শতাব্দী থেকে এটা প্রচলিত হয়ে আসছে মানুষের মাঝে। বর্তমানে অনেকেই আছে যারা এই সেলফ ক্যানিব্যালিজমে ভুগছেন। যদিও এটা অনেক রেয়ার একটা রোগ কিন্তু তারপরেও এই রোগ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। এটা মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। চলুন এ সম্পর্কে আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক।


প্রাণীদের মধ্যে এটা প্রায়ই দেখা যায়। যেমনঃ এক ধরণের ঝিঁ ঝিঁ পোকা আছে যারা নিজেদের ডানা কামড়ে খেয়ে ফেলে। সি স্কোয়ার্ট নামে এক ধরণের সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে যারা নিজেদের ব্রেইন খেয়ে ফেলতে পারে। উত্তর আমেরিক্যা পাওয়া যায় এমন এক ধরণের র‍্যাটল স্নেক রয়েছে যারা নিজেদের সারা শরীর খেয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে ও বিভিন্ন সময়ে নিজেদের শরীরও খেয়ে ফেলে। বেশিরভাগ সময়েই এসব সাপকে দেখতে পাবেন, নিজেদের অর্ধেক শরীরের গেলায় সময়। কারণ তখন তারা সূর্যের আলোয় চলে আসে।

সতের শতাব্দীর দিকে সেলফ ক্যানিব্যালিজম বা নিজের মাংস নিজে ভক্ষণ করাটাকে এক ধরণের ক্রাইম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। ১৯৯০ সালের দিকে সুদানে ও ১৯৯১ সালের দিকে হাইতিতে এমন অনেক ঘটনা দেখা গিয়েছে, যেখানে মানুষকে নিজেদের মাংস খেতে বাধ্য করা হয়েছে।


এখন জানা যাক যে, রোগের ক্ষেত্রে কীভাবে এটা কাজ করে। ঠিক আছে?!

বাই দ্যা ওয়ে, আমার বমি বমি করছে। বমি আসলে রেস্ট নিন। বমি করে আসেন! তারপরে বাকিটুকু পড়বেন নাহয়!

সেলফ ক্যানিব্যালিজম আমাদের মধ্যে অনেকেরই দেখা যায়। বিশ্বাস হয় না? নখ কামড়ান কে কে? জানেন কি এটাও যে এক ধরনের ক্যানিব্যালিজম?!

আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের চুল কিংবা দাঁড়ি কামড়াতে পছন্দ করেন। এটাও এক ধরণের ক্যানিব্যালিজম, সেলফ ক্যানিব্যালিজম। হাহাহা! আমি নিজেও নখ কামড়াই! আমিও ক্যানিব্যাল তাহলে!

কিন্তু আমরা যেটা করছি সেটাকে অনেক সাইকোলজিস্টরাই ক্যানিব্যালিজমের মধ্যে ফেলেন না। কারণ তাদের মতে, আমরা যেটা করছি সেটা আমরা সুস্থ মস্তিষ্কে বুঝে শুনে তারপরে করছি! তাই আন? নখ কামড়ানো আর দাড়ি/চুল খাওয়ার কথা বলছি কিন্তু!

কিন্তু যখন সেটা আমাদের অভ্যাস হয়ে যাবে আর সেটাকে আমরা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না, তখন সেখান থেকে আমরা অন্যের (অন্য মানুষ) মাংস কিংবা ধীরে ধীরে নিজের মাংস খেতে শুরু করতে পারি। আর তখনই এটা ক্যানিব্যালিজমের মধ্যে পড়বে।

আপনারা যারা ওসিডির কথা জানেন, না জানলে খবর আছে! এর আগেও আমি অনেকবার এটা নিয়ে বলেছি। ওসিডি হচ্ছে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার। এই রোগে রোগী একই কাজ কম্পালসিভলি করে থাকেন। যেমন, যদি মশা কামড়ায় তাহলে সেখান থেকে রক্ত বের না করা পর্যন্ত তারা শান্তি পাবে না। কিংবা ঘুমের আগে বারবার তারা দরজা লাগিয়েছে কিনা সেটা না দেখলে তারা শান্তি পায় না। একসময় এটা এত বাজে আকার ধারণ করতে পারে, যার ফলে রোগী নিজের মাংস পর্যন্ত খেতে চায়।

সুতরাং সেখান থেকেও আপনার এই সেলফ ক্যানিব্যালিজম হতে পারে। তবে সায়েন্টিস্টরা যদিও এখনো সঠিকভাবে জানেন না যে, কেনো এটা হয় কিন্তু তারপরেও তাদের মতে – আমাদের শরীরের মধ্যে যে ইউরিক এসিড থাকে সেগুলো আমাদের সেলগুলোকে এক সময় অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বালাতন করতে শুরু করে। তখন আমরা সাবকন্সাশলি বা কন্সাশলি বিরক্ত হয়ে আমাদের শরীরের যে অংশে সেটা হচ্ছে বা যে অংশ তখন সেনসেটিভ হয়ে গিয়েছে সেই অংশ কামড়াতে শুরু করি।

অনেক বিজ্ঞানীদের মতে এটা মূলত ডোপামিনের অভাবে হয়। ডোপামিন হচ্ছে নিউরোলজিক্যাল ক্যামিকেল ও এক ধরনের নিউরোট্র্যান্সমিটার। যেটা আমাদের শরীর ও ব্রেইনের জন্য অনেক বেশি উপকারী ও প্রয়োজনীয়। যারা মূলত ওসিডিতে ভুগে থাকা তারা দেখা যায় যে, এটা করার শুরুতে নিজেকে আটকাতে পারে না কিন্তু যখন আটকে ফেলে তখন তারা আর এটা করা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে না। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে যে – এটা বেশ ভালোভাবেই ওসিডির সাথে যুক্ত। যারা ওসিডি নিয়ে আমার লেখা পোস্টটি পড়েন নি, তারা নিচ থেকে পড়ে নিন!



ক্যানিব্যালিজম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

>> জাপানের এক ক্যানিব্যাল – ইসেই স্যাগাওয়ার মতে, মানুষের মাংসের স্বাদ নেশার মতো ও গন্ধহীন হয়ে থাকে। অনেকটা শুকরের মাংসের মতোই। কিন্তু অনেক বেশি স্ট্রং ও তিতে স্বাদেরও হয়ে থাকে।
>> ক্যানিব্যালদের কাছে মানুষের মাংসের নাম – লং পিগ!
>> জার্মানির এক ক্যানিবল – আর্মিন মিউইয়িসের ভাষ্যমতে, সে প্রথম তার ক্লাসমেটকে খেয়ে থাকে। মানে ক্লাসমেটের মাংস আর কি! সে সেদিন প্রথমবারের মতো তার ক্লাসমেটের শরীর থেকে প্রায় বিশ কেজির বেশি মাংস খেয়ে ফেলে।
>> আরেক ক্যানিব্যাল (আমার নাম মনে আসছে না) বলেছে যে, মানুষের মাংসে মূলত লিঙ্গ, বয়স, শরীরের নির্দিষ্ট অংশ ও রান্না করা নাকি কাঁচা; এর উপর ভিত্তি করে স্বাদের পার্থক্য দেখা যায়।
>> পাপুয়া নিউ গিনির একটি উপজাতি এলাকা ক্যানিব্যালিজমের জন্য বিখ্যাত। তারাই প্রথম ‘কুরু’ নামে একটি রোগ ছড়ায়। যেটা মূলত হয়েছিলো মানুষের পঁচা মাংস খেয়ে।
>> অনেকেই স্পিরিচুয়াল কারণেও এটা করে থাকে। মানে সেলফ ক্যানিব্যালিজমের কথা বলছি আর কি!
>> বিভিন্ন ধরনের ক্যানিব্যালিজমের প্রকার রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হচ্ছে সেলফ ক্যানিব্যালিজম ও সেক্সুয়াল ক্যানিব্যালিজম। সেক্সুয়াল ক্যানিব্যালিজমে যৌন সঙ্গম করার পর, ছেলে বা মেয়ে মূলত একে অন্যের শরীরের বিভিন্ন অংশ ভক্ষণ করে থাকে।
>> এক ধরনের সুপারন্যাচারাল ক্ষমতায়, যদিও সেটাকে মূলত প্যারাসাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার বলা যায় – রোগী মনে করে যে সে যদি অন্যের মাংস খেয়ে ফেলে (বিশেষ করে ব্রেইন ও হার্ট) তাহলে সেই ব্যাক্তির লাইফ ফোর্স ও বুদ্ধি তার মাঝেও চলে আসবে। আর এই প্যারাসাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারকে বলে ‘এক্সোক্যানিব্যালিজম’!

এখন যদি আমি বলি যে, এই দুনিয়াতে আমরা যারা তারা সবাই ক্যানিব্যাল। তাহলে আমাকে কি আপনারা দৌড়িয়ে দেবেন? নাকি গালাগাল শুরু করবেন? আচ্ছা গালি দেয়ার আগে বলে নিই যে, ‘অটোক্যানিব্যালিজম’ নামে এক ধরনের ক্যানিব্যালিজম রয়েছে যেখানে আমাদের শরীরের বিভিন্ন মৃত কোষ ও মৃত নখ বা চুলের রস ইত্যাদিকে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো খেয়ে ফেলে। আর এটা আমাদের সবার সাথেই হয়। সে হিসেবে দেখলে আমরা সবাই ক্যানিব্যাল।
ভাই এত কথা বললেন আপনি কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কি? মানে সেলফ ক্যানিব্যালিজমের সমাধান কী?


এর সমাধান মূলত নিজের প্রাকৃতিক অবস্থাকে সম্মান করা ও ‘ফ্যান্টাসি’র নাম করে কিংবা ভাব ধরতে গিয়ে এমন কিছু না করে বসা যেটা আপনাকে এই রোগের দিকে ঠেলে দেবে। যেমন, অনেকেই সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি পূরণ করতে গিয়ে সেক্সুয়াল ক্যানিব্যালিজমে জড়িয়ে পড়েন।

এর সমাধান হচ্ছে ইটি বা এক্সক্লোসার থেরাপি এবং অন্যান্য সাইকোথেরাপি যেমন – সিবিটি বা কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি। কগনিটিভি বিহেভিয়েরাল থেরাপি নিয়ে আমি আলাদা করে বুঝিয়ে বেশ ডিটেইলসে একটি পোস্ট দিয়েছি। সেটা খুঁজে পাবেন নিচ থেকে!

ইটি হচ্ছে, যেকোনো ভয়কে ফেস করা। আপনি যদি কোনো সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে সেই সমস্যাটাকে আরো কাছ থেকে দেখে আসুন। যদি ভূতের ভয় পান তাহলে ভূত দেখার চেষ্টা করুন। আপনার ব্রেইন যখন যুক্তি বুঝে যাবে তখন আপনার আর সেই সমস্যা থাকবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে মানে সেলফ ক্যানিব্যালিজমে কি করবো? এক্ষেত্রে আপনাকে ইটি করতে হলে, আপনাকে এমন ধরণের ক্যানিব্যাল খুঁজে বের করতে হবে। তাদের অবস্থা দেখে আসুন। তাহলে বুঝে যাবেন যে, তারা কতটা ভালো আছে!

তো এই হচ্ছে, ‘সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস এন্ড ফোবিয়াস’ সিরিজের প্রথম পর্ব। আমি চেষ্টা করছি যত ধরণের সাইকোলজিক্যাল ফোবিয়া বা ডিসঅর্ডার আছে সেগুলোকে আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। চেষ্টা করবো নিয়মিত লেখার জন্য।

চাইলে আমার পার্সোনাল ব্লগ থেকে ঘুরে আসতে পারেন DarkMagician

ক্রেডিট: Muntasir R Mahdi

পোষ্ট আপডেট এবং কিছুটা পরিবর্তনে আমি

সৌজন্যে: Cyber Prince


COMMENTS

Name

Android Apps,25,Android Games,15,Blogger Course,5,Book Review,1,Horror,13,Mp3,2,Notice,3,PC Games,20,Templates Shop,1,অনলাইন আয়,13,অনলাইন ট্রিক,14,কম্পিউটার টিপস,37,মুভি রিভিউ,13,সিম অফার,1,হ্যাকিং,15,
ltr
item
Buy Blogspot Template: সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস এন্ড ফোবিয়াস পর্ব এক - সেলফ ক্যানিব্যালিজম
সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস এন্ড ফোবিয়াস পর্ব এক - সেলফ ক্যানিব্যালিজম
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhUxxp6U11Uh14LnhAcFRHSi37bHeTcB_YbxnmEaK0cWfHO5mFoIQ_M0o6NdEl4HdoiN_9TZTrsbzEKVY07BPJ75Gdba4BSAgDnO-Hxo-ZC6MbswD9uE8aVAjNreTASQ648XfFHFCsVQJU/s640/Screenshot_2019-04-27-04-03-10.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhUxxp6U11Uh14LnhAcFRHSi37bHeTcB_YbxnmEaK0cWfHO5mFoIQ_M0o6NdEl4HdoiN_9TZTrsbzEKVY07BPJ75Gdba4BSAgDnO-Hxo-ZC6MbswD9uE8aVAjNreTASQ648XfFHFCsVQJU/s72-c/Screenshot_2019-04-27-04-03-10.png
Buy Blogspot Template
https://toptemplatesbd.blogspot.com/2019/04/blog-post.html
https://toptemplatesbd.blogspot.com/
https://toptemplatesbd.blogspot.com/
https://toptemplatesbd.blogspot.com/2019/04/blog-post.html
true
4569101340178311797
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS CONTENT IS PREMIUM Please share to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy